ওয়েদারিং উইথ ইউ রিভিউ (Weathering With You)

এনিমে প্রতিবেদন: ওয়েদারিং উইথ ইউ (মুভি)

enter image description here

আনিমের এই জগতে আমার পা রাখাই মাকাতো শিনকাই -এর হাত ধরে এবং অবশ্যই সেই আনিমের নাম ছিলোঃ Your Name (Kimi no Na Wa). এরপর আর পেছন ফিরে তাকানো হয় নি, একের পর এক আনিমে দেখছি, মাকাতো শিনকাই -এর কাজগুলোকে আনিমে ইউনিভার্সের অভিজাত এলাকার সদস্য বলে দাবি করতে করতে তার মুভিগুলো দেখেছি। এবং তিনি আবারো ফিরে এলেন তার মুভি Weathering With You দিয়ে; এই রিভিউটি মাকাতো শিনকাই, মুভির ভালো এবং খারাপ এবং আমার কিছু ব্যক্তিগত ভাবনা মিলিয়েই।

enter image description here

গল্পঃ হোদাকা ঘর পালানো ষোল বছরের একজন কিশোর যে টোকিওতে এসেছে অন্য এক জীবনের আশায়। জাপানের ব্যস্ততম শহর টোকিও তার কাছে বিভীষিকাময় লাগে কেননা টোকিও এবং এর বাইরের অঞ্চল যেন দুটো দুই পৃথিবী (উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, গ্রাম থেকে ঢাকায় আসা নতুন কোন মানুষের প্রথম ঢাকা দর্শনের অনুভূতির মতন); তবু টোকিওর পথে দিন পার করতে করতে তার পরিচয় হয় আঠারো বছরের হিনা নামের এক মেয়ের সাথে এবং কাহিনী এগোনোর সাথে সাথে সে আবিষ্কার করে, হিনা আবহাওয়া পরিবর্তন করতে পারে। ঠিক একই সময়ে টোকিওতে প্রচুর ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছে, টোকিওর ব্যবসায়িক অবস্থা পরিবেশের এই খারাপ অবস্থার জন্য নিম্নগামী। হোদাকা হিনাকে "সানশাইন গার্ল" হিসেবে ব্যবসা শুরু করতে বলে যে, তারা টাকার বিনিময়ে মানুষের প্রয়োজন অনুসারে আবহাওয়া পরিবর্তন করে মানুষকে সাহায্য করবে।

enter image description here

স্পয়লার এলার্ট

(ইওর নেম দেখেছেন, ভালো লেগেছে এবং এটা দেখেন নি - এমন হলে স্পয়লার না পড়াই শ্রেয়) . মাকাতো শিনকাই ইজ ব্যাক উইথ হিজ সিগনেচার স্টাইল - স্টোরি টেলিং এবং আর্ট।

একটা বড় প্রবলেম বলি, ইওর নেইম খুব বড় একটা ঝড় তুলে দিয়েছিলো ওয়ার্ল্ড ওয়াইড; ওয়েদারিং উইথ ইউ স্ট্যান্ড এলোন আনিমে হিসেবে চমৎকার কিন্তু একই ডিরেক্টরের দুটো মুভির উপস্থাপনের এনভায়রনমেন্ট স্টাইলটা একই হওয়ায় রিভিউগুলোতে খুব ভুগতে পারে। কেননা, আমি মুভি দেখার সময় বারবারই ফিরে ফিরে ইওর নেইমের কথা মনে পড়ছিলো। এবং (গভীর স্পয়লার এলার্ট), ইওর নেইমকে মনে পড়তে বাধ্য করে ছাড়লোও।

enter image description here

“ওয়েদারিং উইথ ইউ” এর পৃথিবী আলাদা। অন্যরকম। ব্যস্ত টোকিও শহরের অলিগলি উঠে এসেছে ওয়েদারিং উইথ ইউ -এর সাথে। শহরের সৌন্দর্যের পরিবর্তে শহরের স্বাভাবিক জীবনের ছুটে চলা সময়টা উঠে এসেছে “ওয়েদারিং উইথ ইউ”তে যেটা “ইওর নেইম” থেকে একেবারেই আলাদা। মাঙ্গা ক্যাফে, শহরের কুৎসিত জায়গা, অসহ্যকর আবহাওয়া, অসম্ভব মনে হতে থাকা শহরের জীবনধারণ প্রক্রিয়া, মাফিয়া, ড্যাম কেয়ার মানুষজন - যেগুলো সাধারণ সৌন্দর্যের কথা বলে না, সেগুলোই উঠে এসেছে “ওয়েদারিং উইথ ইউ”তে। তার অন্যান্য মুভির মত চকচকে, ঝকঝকে টোকিও শহরটা নেই, সাদামাটা একটা শহরে রঙিন দুটো প্রজাপতির মত কিশোর কিশোরীর একে অন্যকে আঁকড়ে ধরে বেড়ে ওঠার গল্পটা হয়তো “ইওর নেইম”এর অসাধারণ উপস্থাপনার কাছে মিইয়ে এসেছে বলে মনে হবে প্রচুর দর্শকের কাছেই। কিন্তু আমার কাছে এর আবেদন একেবারেই অন্যরকম, একেবারেই আলাদা! টোকিওর আনাচে কানাচে সারভাইভ করতে করতে যে প্রেম গড়ে ওঠে, রূপ নেয় পরিবারে অথবা যায় ঝরে; মাকাতো শিনকাই এবারে সেই পৃথিবীর প্রেমটাকেই তুলে এনেছে “ওয়েদারিং উইথ ইউ” এর গল্পে, আরও বিশুদ্ধ রকম করে। যে প্রেমের ভেতর হয়তো অন্য কোন কিছুর স্থান নেই।

enter image description here

শিনকাই -এর মুভিগুলো দেখে আমার ভেতর একপ্রকার বিষণ্ণতা কাজ করে। আমার ভেতর একপ্রকার ব্যথাও অনুভূত হয়। কারণ, শিনকাই তার প্রতিটি মুভিতে কেবল দূরত্ব তুলে ধরে। দুটো মানুষ যেন দুই পৃথিবীর, যারা একটু কাছে আসতে চায়, বসতে চায় মুখোমুখি, হয়তো বলতে চায় অগোছালো দু-তিনটে কথা কিন্তু তাদের মাঝে কি বিশাল দূরত্ব! এই দূরত্ব কি করে পাড়ি দিয়ে কাছে এসে একবার বসা যায়? আমার এটা ভাবলেই অদ্ভুত এক ব্যথা অনুভূত হয়, যেন শিনকাই যে জীবনের কথা বলতে চায় তার দৃষ্টিকোণ থেকে, সে জীবনের অদৃশ্য দূরত্ব যেন ব্যক্তিগত জীবনে আমিও অনুভব করতে পারি, কোথাও কিছু একটা থাকার দরকার ছিলো। “দ্য প্রমিস ইন আওয়ার আরলি ডেইজ”, “ফাইভ সেন্টিমিটার পার সেকেন্ড”, “দ্যা গার্ডেন অব ওয়ার্ডস”, “ইওর নেইম” এমনকি “ওয়েদারিং উইথ ইউ”তেও এই দূরত্বের অনুভূতি টের পাওয়া যায়, দুটো মানুষের ভেতর। কিন্তু “ওয়েদারিং উইথ ইউ”তে এর গন্ধটা অন্যরকম। একেবারেই অন্যরকম।

enter image description here

তার অন্যান্য কাজের থেকে একটু আলাদা এই মুভিকে অনুভব করতে হলে হয়তো ভাবতে হতে পারে টোকিওর ছুটে চলা দিনগুলোর কথা, হয়তো ভাবতে হতে পারে আমাদেরই ঢাকা, আমাদের ব্যক্তিগত জীবন এবং আমারই মত সারভাইভ করতে থাকা এই শহরের অচেনা কোনো প্রেমিক-প্রেমিকার কথা। একদিন দেখা হলে বলে দেওয়া যেতে পারে, the world has always been crazy, it's no one's fault that it's like this. I'm sure that I'll be alright, we'll be alright here, in this world. . যে প্রেমের কথা শিনকাই বলে গেলো ওয়েদারিং উইথ ইউতে সেটা কান্নার রংয়ে আঁকা, বেদনার মতন সুন্দর। যে প্রেম শুধু মানুষটাকে চায় এই ব্যস্ততম শহরে, ব্যান্ড রডউইম্পসের সাথে বরাবরের মতই জীবন্ত হয়ে ফিরে এসেছে, বলতে চেয়েছে অনুভূতিটার কথা, দর্শক হয়তো খুব গোপন করে একসময় লালন করেছিলো সেই অনুভূতি। . অবশ্যই মুভিতে প্লটহোল আছে, ফ্যান্টাসি জনরার উপাদান আছে, স্টোরি এডভান্স হওয়ার কিছু জায়গা দুর্বল মনে হয়েছে বেশ কিন্তু যে গল্প আমি শুনতে চেয়েছি, বুঝতে চেয়েছি সে গল্পটা আমাকে টান দিয়ে উঠিয়ে নিয়ে এসেছে সেসব জায়গা থেকে। আমাকে বলতে চেয়েছে শিনকাই ইউনিভার্সের কথা, পরিচয় করিয়ে দিয়েছে তার পৃথিবীর সাথে। আর মেজর স্পয়লারটা এখানেই, “ইওর নেইম”এর তাকি আর মিতসুহার দেখা পাওয়া (মিতসুহার মত রূপবতী আর কেউ নাই। :/ )

enter image description here

মুভিটা শেষ করে আমি ভাবছি, অবশ্যই আরও দশজন দর্শকের মত করে ভাবছি, দুটো গল্পের পৃথিবী একই। দুটো গল্প না শুধু, যেমন “দ্য গার্ডেন অব ওয়ার্ডস”এর “ইউকিনো”কেও দেখা গিয়েছিলো ইওর নেইমে, বলা যায় তিনটে গল্পের পৃথিবী একটাই। শিনকাই পৃথিবী, যে পৃথিবীতে শিনকাই বাস করেন, শিনকাই বেঁচে আছেন এবং শিনকাই এর সমাপ্তির সাথে সাথেই পৃথিবীটা শেষ হয়ে যাবে। শিনকাই যেন বলতে চাইছেন, একই পৃথিবীতে সুখ দুঃখ হাসি কান্নার কথা, আমাদের ব্যক্তিগত পৃথিবী আলাদা এবং সবাই ঘুরেফিরে একে অন্যের সাথে একই সুতোয় গাঁথা। আমার মনে হলো, শিনকাই নিজেও চাচ্ছেন, তার চরিত্রগুলোর পৃথিবীতে, তার পৃথিবীতে তার নিজেকে লুকিয়ে রাখতে। অবশ্য এসব নিতান্তই আমার ব্যক্তিগত ভাবনা, কিন্তু আমার মনে হলো, একই পৃথিবীকে ভিন্ন ভিন্ন মানুষের চোখ দিয়ে উপস্থাপন করতে চাইছেন তিনি, কারণ বাস্তবে আমাদের দেখার দৃষ্টিকোণ আলাদা। আপনি যে চোখে ঢাকাকে দেখেন, যে ভাবনায় ভাবেন, সেভাবে আমি অবশ্যই দেখি না এবং ভাবি না এবং শিনকাই তার পৃথিবীকে চেনার জন্য সেটা তুলে ধরছেন ভিন্ন ভিন্ন মানুষের চোখ থেকে। আমার মনে হয়, সামনেও তিনি একই কাজ করবেন এবং আবারো অন্য কারো চোখে তুলে ধরবেন শিনকাই-পৃথিবীকে।

<কিন্তু তখনো মিতসুহা সবচেয়ে রূপবতী তরুণীই থাকবে আমার কাছে। আই লাভ মিতসুহা। মুভিতে ওকে দেখার পর পজ করে অনেকক্ষন দেখে নিয়েছিলাম মিতসুহাকে।> . সাজেশনঃ ইওর নেইম থেকে ভালো হবে না খারাপ হবে ভাবা ছেড়ে দিয়ে উপভোগ করুন অন্যরকম টোকিওকে যদিও, ইয়ে মানে মিতসুহাই তখনো সেরা রূপবতী থাকবে, এটা না মানলে চলবে না। :3 . সংক্ষেপেঃ • Anime : Weathering with you (Tenki no Koe) • Type : Movie • Genre : Slice of life, romance, fantasy • Director : Makoto Shinkai ব্যক্তিগত রেটিংঃ ৮/১০

enter image description here

প্রতিবেদনটি লিখেছেন: Loknath Dhar

কমিক্স ঘরের একটি নিজস্ব প্রতিবেদন।